আমি কোনো আগন্তুক নই

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | | NCTB BOOK

আসমানের তারা সাক্ষী

সাক্ষী এই জমিনের ফুল, এই

নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী

সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী

পুবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি

মাছরাঙা আমাকে চেনে

আমি কোনো অভ্যাগত নই

খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই

আমি কোনো আগন্তুক নই ।

আমি কোনো আগন্তুক নই, আমি

ছিলাম এখানে, আমি স্বাপ্নিক নিয়মে

এখানেই থাকি আর

এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা

সারা দেশে।

আমি কোনো আগন্তুক নই ৷

এই খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের

পাখিরা আমাকে চেনে

তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই ।

কার্তিকের ধানের মঞ্জরী সাক্ষী

সাক্ষী তার চিরোল পাতার

টলমল শিশির – সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা

        নিশিন্দার ছায়া

অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী

তার ক্লান্ত চোখের আঁধার –

আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন । আমি

জমিলার মা'র

শূন্য খা খা রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি

সে আমাকে চেনে।

হাত রাখো বৈঠায় লাঙলে, দেখো

আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর । দেখো

মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে

লেগে আছে এই স্নিগ্ধ মাটির সুবাস।

আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোনো আগন্তুক নই ।

দু'পাশে ধানের খেত

       সরু পথ

সামনে ধু ধু নদীর কিনার

আমার অস্তিত্বে গাঁথা । আমি এই উধাও নদীর

মুগ্ধ এক অবোধ বালক ৷
 

Content added || updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

পরশ অনুভব করার জন্য
শপথ নেয়ার জন্য
কবিকে খুঁজে পাবার জন্য
অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য
শূন্য খাঁ খাঁ রান্নাঘর
সরু পথ
ধানের ক্ষেত
ধু-ধু নদীর কিনার
সেইদিন এই মাঠ
সাহসী জননী বাংলা
আমার পরিচয়
আমি কোনো আগন্তুক নই
ধানের মঞ্জরি
গ্রামীণ একধরনের গাছ
অভাবী শ্রেণির প্রতিনিধি
গভীর রাত
খররৌদ্র, জলজ বাতাস
জলজ বাতাস, টলমল শিশির
নিশিন্দার ছায়া, ধানের মঞ্জরী
কার্তিকের ধান, চিরোল পাতা
স্বদেশ সান্নিধ্যের সর্বব্যাপকতা
স্বদেশ অনুভবের বিহ্বলতা
স্বদেশের সবকিছুই চেনাজানা
স্বদেশপ্রেমের আকুলতা
অসুখে
বার্ধক্যে
ক্লান্তিতে
হতাশায়
রাণী খালের সাঁকো
মেঘ বলে চৈত্রে যাবো
জোছনা রাতের গল্প
ছুটির দিন দুপুরে
মনোহর প্রকৃতি
আকর্ষণীয় গ্রামবাংলা
কাদামাটির গন্ধ
গ্রামের সঙ্গে যোগসূত্র
মাটির সুবাস তাঁর শরীরে লেগে আছে
জন্মভূমির সাথে তাঁর নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক
জন্মভূমির স্নিগ্ধ মাটিতে মিশে আছেন
তিনি সুবাসিত মাটিকে গভীর ভালোবাসেন
ভি কার্তিকের ধানের মঞ্জুরির
টলমল শিশিরের
জমিনের ফুলের
স্নিগ্ধ মাটির সুবাস
রাতে আলো দেয় বলে
উজ্জ্বলতার কারণে
শাশ্বত অবস্থানের গুরুত্বের কারণে
কবির খুব পছন্দের বলে
দাবিকে জোরালো করার জন্য
কবিতার স্টাইলের জন্য
লোকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য
নিজেকে জাহির করার জন্য
যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্রণা
মানুষের প্রতি প্রেম ও ভ্রাতৃত্ববোধ
গভীর জীবনবোধ আশাবাদ
গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রসার
জন্মভূমিকে উপলব্ধি করা
বিদেশিদের প্রতি অনাগ্রহ
শিকড়ের প্রতি কবির বিশ্বস্ততা
কবির গভীর বৈরাগ্য ও হতাশা
স্নিগ্ধ মাটির সুবাস
নিশিন্দার ছায়া
উধাও নদী
ধান ক্ষেত
ধানের বোঝা
ধানের গাছ
ধানের শীষ
ধানক্ষেত
জীবনানন্দ দাশ
সুকান্ত ভট্টাচার্য
কাজী নজরুল ইসলাম
আহসান হাবীব
অলক্ত ও কলম সাহিত্য পদক
স্বাধীনতা ও কলিতা পদক
বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতা পদক
বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক
আমি কোনো অভ্যাগত নই
আমি কোনো আগন্তুক নই
আসমানের তারা সাক্ষী
খোদার কসম আমি কোনো ভিনদেশি পথিক নই
মাছরাঙা আমাকে চেনে
আমি কোনো আগন্তুক নই
আমি স্বাপ্নিক নিয়মে এখানেই থাকি
মাটিতে আমার গন্ধ
শাশ্বত অবস্থানের গুরুত্বে
রাতে আলো দেয় বলে
আকাশে মিটিমিটি জ্বলে
কবির খুব পছন্দের
চাঁদের আলোয় ঝলমল
রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম
নিশিরাইত বিস্তর জোনাকি
ডাহুকের ডাকে ছমছম
শিকারে মনোসংযোগ
রৌদ্রে ভেজা পাখা শুকাতে
গোসল করার জন্য
কবিকে দেখার জন্য
শিকারের তীক্ষ্ণতায়
ঠোঁটের তীক্ষ্ণতায়
চলাচলের গতিময়তায়
সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়
কবি পিরোজপুরের শঙ্করপাশায় জন্মেছেন বলে
কবির জন্মনিবন্ধন সনদ রয়েছে বলে
দেশের চারপাশের প্রকৃতি কবিকে চেনে বলে
তিনি একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক বলে
স্বদেশের সন্তান হিসেবে কবির স্বীকারোক্তি
স্বদেশের সন্তান হিসেবে কবির দম্ভোক্তি
কবির স্বদেশপ্রেমের ব্যঞ্জনা
কবির স্বদেশ গর্বে গর্বিত উক্তি
অতিথি পাখিরা
ক্লান্ত বিকেলের পাখিরা
হাওর-বিলের পাখিরা
পরিযায়ী পাখিরা
কবির সপক্ষে কার্তিকের ধানের সাক্ষ্যদান
কার্তিক নবান্নের দেশে কবির আজন্ম উপস্থিতি
কার্তিক মাসে ধানের মঞ্জরি আসার চিত্র
কবির কাব্যালংকারের চমৎকার উপমা
কবির আত্মীয়া
কবির পরিচিতজন
কবির গৃহপরিচারিকা
কবির অনাত্মীয়া
নারী নির্যাতনের চিত্র
ছায়া সুনিবিড় পল্লিকটির
নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা
রাজনৈতিক দলের প্রতীক
শ্রম ও সংগ্রামের প্রতীক
গ্রামবাংলার নিত্যব্যবহার্য বস্তুর প্রতীক
শোষিত ও বঞ্চিতদের প্রতীক
তাকে আসমানের তারা চেনে বলে
তিনি কদম আলীর স্বজন বলে
তিনি কোনো আগন্তুক নন বলে
তিনি একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক বলে
জানুল জামরুল
বাঁশবাগান
ঝাঁকড়া ডুমুরের ডাল
ধানের খেত
পিরোজপুরে
কবির অস্তিত্বে
ধানখেতের পাশে
জমিলার মা'র ঘরের কোণে
অবোধ বালকের সৌন্দর্য মুগ্ধতায়
না পাওয়ার বেদনায়
শোকার্ত হাহাকারে
নিজ সত্তার সুদৃঢ় ঘোষণায়
জীবন পর্যন্ত
মৃত্যু পর্যন্ত
আসমান সমান জীবন
জীবন সমান আসমান
স্বদেশানুভূতি ও স্বদেশপ্রেম
ভূমিসন্তানের গর্বিত উচ্চারণ
জমিলার মা'র দুঃখানুভূতি
বৈঠায় লাঙলে হাতের স্পর্শ
ভূখণ্ড
জনগোষ্ঠী
চারপাশের প্রকৃতি
মানচিত্র
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে
আইনের বন্ধনে
সাদামাটা সম্পর্কে
গভীরভাবে
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

"এই বলে মোর নাম খ্যাত হোক
আমি তোমাদেরই লোক।'

স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
আমার পরিচয়
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
আমি কোনো আগন্তুক নই
গণসূর্যের মত কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই
সবাই অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

ওই যে দেখ নীল নোয়ানো সবুজ ঘেরা গাঁ 

কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা।

পল্লিজননী
আমার পরিচয়
আমি কোনো আগন্তুক নই
সেইদিন দিন এই মাঠ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনেচ

 সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে;

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

প্রায় তিন বছর বাইরে কাটিয়ে শায়েরদের পরিবার আবার গ্রামে ফিরে এসেছে। পাঁচ বছর বয়সী শায়ের অবাক হয়ে তালপুকুর পাড়ের তালগাছটির দিকে তাকায়। তালগাছটিও যেন মমতাভরে তাকে দেখছে। এমান সময়ে কোত্থেকে যেন একসময়কার পোষা কুকুর এসে শায়েরের গা শুঁকতে শুরু করে।

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও

ঘাটে পৌছতে পৌঁছতে বিকেলের রোদ পশ্চিমে পড়ে আসছিল। ঘাটের মাঝি বৃদ্ধ সলিমুদ্দিন একগাল হেসে বলল, কিবা আছ নূরু মিয়া? মধুমতির খলবল করে চলা জলও যেন বলে উঠল, কেমন আছ আমার সোনা। নদী পার হওয়ার পর কাঁদু বুড়ির খড়ের ঘর পড়ে। শুকনো খাঁ খাঁ রান্নাঘরে বসে থাকা কাঁদু বুড়ি দু চোখের পাতা প্রসারিত করে বলল, কে যায়? ও জমিলা বুর ছাওয়াল না?

কবি পরিচিতি

আহসান হাবীব ১৯১৭ সালের ২রা জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে আইএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। কর্মজীবনে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ তাঁর কবিতাকে বিশিষ্ট ব্যঞ্জনা দান করেছে। তাঁর কবিতার স্নিগ্ধতা পাঠকচিত্তে এক মধুর আবেশ সৃষ্টি করে। তিনি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর প্রথম কাব্য রাত্রিশেষ। এ ছাড়া ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য। ছোটোদের জন্য তাঁর কবিতার বই জোছনা রাতের গল্প ও ছুটির দিন দুপুরে। রানী খালের সাঁকো তাঁর কিশোরপাঠ্য উপন্যাস। আহসান হাবীব তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক পুরস্কার লাভ করেন। দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক থাকাকালে ১৯৮৫ সালের ১০ই জুলাই তাঁর জীবনাবসান ঘটে। 
 

Content added By

শব্দার্থ ও টিকা

 আসমান – আকাশ। সাক্ষী – কোনো কিছু নিজচোখে দেখেছেন এমন কেউ। জমিন- ভূমি।

নিশিরাইত – ‘নিশীথ রাত্রি’র গ্রামীণ কথ্যরূপ (গভীর রাত বোঝাতে)।

অভ্যাগত – গৃহে এসেছে এমন ব্যক্তি, আগন্তুক, নিমন্ত্রিত অতিথি।

ধানের মঞ্জরী – মঞ্জরী হলো মুকুল বা শিষ, ধানের মঞ্জরী হলো ধানের শিষ বা মুকুল।

নিশিন্দা – গ্রামীণ এক ধরনের গাছ।

জমিলার মা'র...সব চিনি - গরিব, অভাবী শ্রেণির প্রতিনিধি জমিলার মা। তাদের রান্নাঘর শূন্যই থাকে সাধারণত। কারণ রান্না সব চিনি করার খাদ্য উপাদান তাদের নেই। যেহেতু রান্না করা হয় না, খাবারও খাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই থালা-বাসনও শুকনো থাকে। কবিও সেই অবস্থার কথা জানেন।

স্নিগ্ধ মাটির সুবাস - মাটির মিষ্টি গন্ধ । অর্থাৎ মায়াবী ও আকর্ষণীয় গ্রামবাংলা ।

দু'পাশে ধানের ক্ষেত ... আমার অস্তিত্বে গাঁথা – কবি গ্রামীণ জীবনেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের মাঠ-ঘাট পথ-প্রান্তরের মতো ক্ষেতের সরু পথ, তার পাশে ধানের সমারোহ এবং একটু এগিয়ে গেলে বিশাল নদীর কিনার কবির মনের ভেতর, অস্থি-মজ্জায় গ্রথিত হয়ে আছে। এরা সবাই কবির খুবই চেনা-জানা ।

Content added || updated By

পাঠ পরিচিতি

জন্মভূমির সঙ্গে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। এর সবকিছুই তার মনে হয় কত চেনা, কত জানা। জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেড়ে থেকেই মানুষ তাই সমগ্র দেশকে আপন করে পায়। এই অনুভূতি তুলনাহীন। দেশ মানে তো শুধু চারপাশের প্রকৃতি নয়, একে আপন সত্তায় অনুভব করা। আর দেশকে অনুভব করলেই দেশের মানুষকেও আপন মনে হবে আমাদের। এই কবিতায় বাংলা সাহিত্য
সেই অনুভবই আন্তরিক মমতায় সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন কবি। তিনি উচ্চারণ করছেন, তিনি কোনো আগন্তুক নন । তিনি যেমন ওই আসমান, জমিনের ফুল, জোনাকি, পুকুর, মাছরাঙাকে চেনেন, তেমনি তারাও তাকে চেনে । পাখি, কার্তিকের ধান কিংবা শুধু শিশির নয়, তিনি এই জনপদের মানুষকেও ভালোভাবে চেনেন। তিনি কদম আলী, জমিলার মা'র মতো মানুষের চিরচেনা স্বজন। কবি অনুভব করেন, যে-লাঙল জমিতে ফসল ফলায়, সেই লাঙল আর মাটির গন্ধ লেগে আছে তার হাতে, শরীরে। ধানক্ষেত আর ধু ধু নদীর কিনার, অর্থাৎ এই গ্রামীণ জনপদের সঙ্গেই তার জীবন বাঁধা । এই হচ্ছে তাঁর অস্তিত্ব। এই হচ্ছে মানবজীবন, জন্মভূমির সঙ্গে যে-মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত ।
 

Content added By
Promotion